ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং কেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কিছু মৌলিক আলোচনা ও সাধারন প্রশ্নাবলীর উওরসমুহ What is Cryptocurrency some basics Idea about cryptocurrency with questions and answers


প্রাচীনকাল থেকেই সাধারণ মানুষ অর্থ আদান-প্রদানের জন্য এমন এক মাধ্যম খুঁজছিল যাতে করে শাসকগোষ্ঠীর সেই সকল অর্থ আদান-প্রদানের কোন হদিস না পেতে পারে। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত এই ধারণাটি শুধুই একটি অবাস্তব ধারণা ছিল। ২০০৮ সালে যখন বিটকয়েন নামক এক ক্রিপ্টোকারেন্সি জন্ম হয় তখন থেকেই উক্ত ধারণাটি যেন সত্য হয়ে সবার সামনে উঠে আসে। এরকম কোন কিছু হওয়ার ধারণা অনেক আগ থেকেই করে এসে ছিল অনেক মানুষ কিন্তু সেটাকে বাস্তবে রূপ দেয় ২০০৮ সালের ৩১ শে অক্টোবর এক অদ্ভুত ব্যক্তি । যিনি এখনো পর্যন্ত একজন রহস্যময় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত সকলের মাঝে।  

এ সময় তিনি ইন্টারনেটে একটি পেপার পাবলিশ করেন যেখানে তিনি উল্লেখ করেন‌-এখন থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি অর্থাৎ বিটকয়েনের মাধ্যমে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের কাছে সরাসরি অর্থ  আদান প্রদান করতে পারবে আর এর মাঝখানে কোন সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যোগসাজশ থাকবে না। অর্থাৎ পুরো সিস্টেমটাই হবে একেবারে মুক্ত। ক্রেতা এবং বিক্রেতা ছাড়া তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কোন অস্তিত্ব থাকবে না। যেমনটা মার্কিন অর্থ লেনদেনের সমস্ত বিষয় সমূহ নিয়ন্ত্রণ করে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অথবা বাংলাদেশের সমস্ত অর্থ লেনদেনের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট। অপরদিকে এসকল ক্রিপ্টোকারেন্সি কোন দেশের বা দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। আর এজন্যই হু হু করে ক্রিপ্টোকারেন্সি এর জনপ্রিয়তা আজকের দিনে বেড়েই চলছে।


ক্রিপ্টোকারেন্সি আসলে কি? (What is cryptocurrency?)

এটা বুঝার জন্য আমাদেরকে আসলে একটু অতীতে ফিরে যেতে হবে। আজকে আমরা যে ইউএস ডলার বা বাংলাদেশের অর্থ ব্যবহার করছি সেটি আসলে কিভাবে আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে তার একটু বিশ্লেষণ করা দরকার। আমরা বাংলাদেশি মুদ্রায় খাদ্যদ্রব্য পাই  বিনিময় ক্রেতা হিসেবে বিক্রেতাকে কাগজের নোট প্রদান করি। এখন যদি আমি আপনাকে প্রশ্ন করি বিক্রেতা কেন সামান্য একটি কাগজের বিনিময় আমাকে খাদ্যদ্রব্য দিচ্ছে? তার কারণ হচ্ছে এই কাগজটি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা স্বীকৃত বা সত্যায়িত। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার আমাদেরকে এই কাগজ দ্বারা লেনদেন করা একটি স্বীকৃত উপায়ে তৈরি করে দিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এর উপর। যাতে আমরা বিশ্বাস করি এতে করে আমরা পণ্য আদান প্রদান করতে পারব। এজন্য আপনি যদি বাংলাদেশের যে কোন নোটের নোটের গায়ে লক্ষ্য করেন সেখানে লেখা থাকে চাহিবামাত্র ইহার বাহককে উক্ত অর্থ দিতে বাধ্য থাকিবে। আর এই কথাটির নিচে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে। যদি এই লেখাটির না থাকতো তাহলে এটি শুধুই একটি কাগজ হিসাবে থাকতো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের মানুষদের পণ্য লেনদেনে একটি গ্রান্টেড সার্টিফিকেট প্রদান করেছে।



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার মার্কিন ডলার কে একটি গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল আর এর পিছনের কারণ ছিল মার্কিন ডলার যার উপর ভিত্তি করে লেনদেন হবে সেটি হচ্ছে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা থাকা স্বর্ণের কারণে। ১৯৭১ সালে আমেরিকা স্বর্ণের বিনিময়ে মার্কিন ডলার এই পদ্ধতিটি পুরোপুরি বাতিল করে দেয়। এরপর থেকেই বিশ্বের যেকোন দেশ তাদের নিজস্ব কারেন্সি অর্থাৎ নোট ছাপাতে থাকে। 

 

আপনি যখন ব্যাংকে আপনার অর্থ জমা রাখেন তখন ব্যাংক আপনার অর্থ দিয়ে কি করে? ব্যাংক আপনার ওই অর্থ অন্য জায়গায় ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ করে বা অন্য কাউকে লোন হিসেবে দেয় আর সেখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমান লভ্যাংশ আপনাকে দিয়ে থাকে। এভাবে ব্যাংক কাজ করে। সম্প্রীতি এমনও দেখা গিয়েছে যে কিছু ব্যাংক এমন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ব্যাপক হারে লোন দিয়েছে আর তারা সেসকল লোন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে সেই কারণে যারা ডিপোজিটর অর্থাৎ ব্যাংকে অর্থ জমা রাখে তারা ব্যাপক অসুবিধায় পড়ে। এভাবে অনেক ব্যাংক পথে বসে গিয়েছিল। আর এর ফল ভুগতে হয়েছে যারা ব্যাংকে নিয়মিত তাদের অর্থ জমা দিয়ে থাকতো। আর এই কারনেই সাধারণ মানুষের নিকট ধীরে ধীরে ব্যাংকে অর্থ জমা করার পরিমাণ কমছে।

অপরদিকে আপনি যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যাপারটি লক্ষ্য করেন তাহলে এখানে শুধু আপনি ক্রেতা এবং বিক্রেতা মাঝে যে লেনদেন হবে সেটাই থাকবে এতে তৃতীয় পক্ষ থাকবে না। অর্থাৎ সরকারি ব্যাংক বা অন্য কারও হস্তক্ষেপ ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনে থাকে না। আর সাধারণ মানুষ এরকম একটি পদ্ধতি হাজার বছর ধরে ভেবে এসেছিল। সাধারণ মানুষ যাতে সরকার বা তৃতীয় কোনো পক্ষের নিকট আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে দায়িবদ্ধ না থাকে, মুক্ত ভাবে যাতে আর্থিক লেনদেন করতে পারে। এতে যেমন সময়ের অপচয় কমবে অর্থ থাকবে নিরাপদ এবং অর্থ লেনদেনের খরচ খুবই কম হবে।

বিটকয়েন কে বিকল্প অর্থ হিসেবে চিন্তা করা যায়। অর্থাৎ যেটি কম্পিউটার বেসড সফটওয়্যার এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং তৃতীয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ বাহিরে থাকবে।

২০০৮ সালে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় অনেক বড় বড় ব্যাংক পথে বসে গিয়েছিল। আর এই বিপর্যয়ের পরই ক্রিপ্টোকারেন্সি জন্ম হয়। যেখানে বিটকয়েন সর্বপ্রথম আবিষ্কার হয় এবং এর পেছনে ইথারিয়াম, লাইট কয়েন, বাইনান্স কয়েন, ডগি কয়েন, কসমস কয়েন ইত্যাদি একে একে আসতে থাকে। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে রয়েছে ।


ক্রিপ্টোকারেন্সি যেভাবে কাজ করেঃ ( How does cryptocurrency work?)

আসলে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে সেটা জানতে হলে কম্পিউটার সাইন্স জ্ঞান থাকা অবশ্যক। কিন্তু আমরা ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে কিভাবে বানিজ্য বা বিনিয়োগ করা যায় সেটি সম্পর্কে জানতে পারি। সকল বিটকয়েন ট্রানজেকশনের একটি পাবলিক খাতা বা একাউন্ট থাকে যেটাকে বলা হয়‌ লেডজার (LEDGER). যারা বিটকয়েনের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত তাদের সকলের কাছেই এই লেডজার (LEDGER) এর একটি ডাটা থাকে। আর যারা এই সিস্টেম পরিচালনা করে তাদেরকে মাইনারস বলে ( Miners) আর এই মাইনারস দের কাজ হচ্ছে ট্রানজাকশন গুলোকে ভেরিফাই বা যাচাই করা। মনে করুন তানিম ফারুকের কাছে দুই বিটকয়েন পাঠাবে। এখন মাইনারের কাজ হচ্ছে তানিমের খাতায় দুই বিটকয়েন সত্যিই রয়েছে কিনা তা যাচাই করা। এই ট্রানজেকশন সম্পন্ন করার জন্য মাইনারকে এক জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হয়। আপনি হয়ত স্কুলেই ভেরিয়েবলস ( Variables) সম্পর্কে পড়েছেন। সকল বিটকয়েন ট্রানজেকশনের একটি ইউনিক ভেরিয়েবল থাকে। আর মাইনারের কাজ হচ্ছে এই ভেরিয়েবল টি কে খুঁজে বের করা।

এটা এরকম নয় যে কেউ খাতা এবং কলম নিয়ে এই কাজটি সম্পন্ন করে থাকে। বরং এটি কম্পিউটারে অটোমেটিক ভাবে হয়ে থাকে। কারণ হচ্ছে এই ইকোয়েশন এতটাই জটিল যে এগুলো সংখ্যায় প্রায় কয়েক কোটির ঘরে পর্যন্ত চলে যায়। আর এ কারণে মাইনারদের অনেক হাই লেভেলের প্রসেসিং কম্পিউটার এর প্রয়োজন পড়ে। এই ইকোয়েশন একবার সম্পন্ন হওয়ার পর দ্বিতীয় কম্পিউটার এটিকে কনফার্ম করে আর এই ট্রানজেকশন চেইন এর মধ্যে সংযুক্ত হয়ে যায়। এখানে ট্রানজেকশনের একটি ব্লক তৈরি হয়। আর এই টেকনোলজি নাম দেওয়া হয়েছে ব্লকচেইন টেকনোলজি। তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে মাইনাররা এসব করে কি লাভ হয়? এটির উত্তর হচ্ছে যখন মাইনারদের কম্পিউটার এসব ট্রানজেকশন সম্পন্ন করে তখন তারা উপহার হিসেবে কিছু পরিমাণ বিটকয়েনের পায়। আর এটিকে বলে বিটকয়েন মাইনিং।

 

বিট কয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো কিভাবে ব্যবহার করা যায়?

ক্রিপ্টোকারেন্সি কে এখন অনেক লোক ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে আবার অপরদিকে কিছু লোক এটিকে বিকল্প মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। কিছু লোক রয়েছে যারা বর্তমান অর্থের পরিবর্তে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে চাইছে। অর্থাৎ তারা সকল আর্থিক ট্রানজেকশন ক্রিপ্টোকারেন্সি এর মাধ্যমে সম্পন্ন করবে। কিন্তু বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে সেটি হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ আর এই বিনিয়োগ কারা করে? যারাই ক্রিপ্টো সম্পর্কে জানে তারাই করে। অর্থাৎ আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কিছু অর্থ ইনভেস্ট করবেন এবং কয়েক বছর পর এখান থেকে কয়েক গুণ বেশি অর্থ ফেরত পাবেন। অনেকটা শেয়ার মার্কেট এর মত। যেমনটা আমরা করে থাকি স্বর্ণের সাথে। আমরা স্বর্ণ কিনে সেটি ব্যাংকে জমা করে থাকি এবং যখন এটির দাম বাড়ে তখন বিনিময় কিছু বাড়তি অর্থ আশা করি। তেমনি ভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি একইভাবে স্বর্ণের মতো কাজ করে। তাই বিটকয়েন কে এখন আধুনিক স্বর্ণ (Digital Gold) বলা হয়ে থাকে।

অন্যসব ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ এর মত ক্রিপ্টোকারেন্সিতেও ঝুঁকি রয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি সমালোচকরা বলে থাকেন যে স্বর্ণ আমরা ফিজিক্যালি বা শারিরীকভাবে স্পর্শ করতে পারি। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি কে আমরা সেভাবে পারিনা এটি শুধু একটি কম্পিউটার সম্পর্কিত প্রোগ্রাম মাত্র। আপনি এটি পাশের দোকান থেকে পাউরুটি কিনতে পারবেন না। যদিও কথাগুলো সত্য আমাদের সমাজে এখনও ব্যাপক হারে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বাড়েনি কিন্তু হয়তো ভবিষ্যতে এই ধারণাটি বদলাতে পারে। ইতিমধ্যে ইউরোপ আমেরিকার মতো কয়েকটি দেশে বিটকয়েনের মাধ্যমে  ট্রানজেকশন শুরু হয়েছে। অনেক রেস্তুরায় শপিংমলে বিটকয়েনের মাধ্যমে আপনি শপিং করতে পারবেন।

 

শুনে অবাক হবেন এমনকি আমিও আমার সাইটের এই ডোমেইনটি বিটকয়েনের মাধ্যমে নিয়েছি। ফরেন ফিস ট্রানজেকশন এ যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা হয় তাহলে উভয় দেশই ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। এর কারণ হচ্ছে বর্তমানে ফরেন ফিস ট্রানজেকশন করার জন্য ব্যাংক গুলো অনেক অর্থ ফি হিসেবে কেটে নেয়। কিন্তু যদি বিট কয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলিতে এই ট্রানজেকশন  করে দুইটি দেশ তাহলে এই ফি এর পরিমাণ অনেক অনেক কম হবে। এখানে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে অনেকটাই ইকনোমিক্যাল বলা যায়, যেখানে ব্যাংক এক থেকে দুই দিন লাগিয়ে দেয় অর্থ আদান-প্রদান করাতে সেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাত্র দশ থেকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে সেটি সম্পূর্ণ করতে পারে। এমনটা হতে পারে ক্রেডিট কার্ডের সাথেও। এই কারণে ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি এবং রেমিটেন্স কোম্পানি ক্রিপ্টোকারেন্সি এর সাথে অনেক মতানৈক্য রয়েছে। কারণ ক্রিপ্টোকারেন্সি পদ্ধতি তাদের বিজনেস মডেল কে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে। আর এই চিন্তা থেকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ডিজিটাল অর্থ আদান প্রদান কারী কোম্পানি পেপাল ক্রিপ্টো ট্রানজেকশন এর ফিচারস সংযুক্ত করেছে। বাংলাদেশেও ক্রিপ্টোকারেন্সি এতদিন বৈধ ছিলনা কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সিআইডি এর নিকট একটি চিঠিতে আবেদন করে বলেছে যে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করতে কোন অসুবিধা নেই। মানুষ এটির মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদান করতে পারে। সুতরাং এতে বোঝা যায় খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ হয়তো ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধতা পাবে।


এখন ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা যাক-


ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ কি? (The future of cryptocurrency)

ক্রিপ্টোকারেন্সি কে এখন থেকে বিকল্প অর্থ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে যদিও অনেক সমালোচক ক্রিপ্টোকারেন্সিকে সমালোচনা করে বলেছেন যে, এতে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে। যেখানে থাকবে না কোন তৃতীয় পক্ষের সাক্ষী সেহেতু বৈধ নয় এমন কাজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এর মাধ্যমে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। 


আর কি কি উপায় আছে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করার? (Ways to use cryptocurrency)

ইনভেস্টমেন্ট করার মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা এখন খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। মার্কিন ডলার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর বিকল্প হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়েই বিশেষ করে এখন বিভিন্ন বিনিয়োগ হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে।


জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনগুলো? ( What are the most popular cryptocurrencies?)

২০২১ সালে বিটকয়েন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করা ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলোর মধ্যে একটি।বর্তমানে মোট ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট ভ্যালু ১ ট্রিলিয়ন ডলারের উপরে রয়েছে। যার মধ্যে বিটকয়েনই ৭০০ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন বর্তমানে প্রায় ৬ হাজারেরও অধিক ক্রিপ্টোকারেন্সি ইন্টারনেটে রয়েছে। আর তারা একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে মার্কেটে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। সেরা পাঁচটি ক্রিপ্টোকারেন্সি যাদের মার্কেট ভ্যালু সর্বমোট ৮০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে সেগুলো হলঃ বিটকয়েন, ইথারিয়াম, এক্স আরপি, টিথার, এবং লাইটকয়েন।


এত ক্রিপ্টোকারেন্সি কেন? (Why there is so many cryptocurrencies in market?)

বিটকয়েনের সফলতা দেখে মানুষ এখন নতুন কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি বাস্তবায়ন করার চেষ্টায় মত্ত আছে। বিনিয়োগকারী, ডেভলপাররা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে এসব নতুন নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ অর্জন করার রাস্তা।


এখন পর্যন্ত কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি কি অসফল হয়েছে? (Has any cryptocurrency failed so far?)

হ্যাঁ অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন পর্যন্ত অসফল হয়েছে আর এই সংখ্যাটা নেহাত কম নয় প্রায় ২০০০ ক্রিপ্টোকারেন্সি। আর এই অসফলতার কারণ হচ্ছে যথাসময়ে তহবিল গঠন না করতে পারা, সঠিক পন্থা অবলম্বন না করা ইত্যাদি। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ব্যাপক পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি অসফলতার মুখ দেখেছিল।


মানুষ কেন ক্রিপ্টোকারেন্সি কে বিকল্প মুদ্রা হিসেবে দেখছে? (Why do people see cryptocurrency as an alternative currency?)

ক্রিপ্টোকারেন্সি বর্তমানে এমন সব সম্ভাবনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে যেগুলো কয়েক বছর আগেও সম্ভব ছিল না। চলুন কিছু আসল কারণ জেনে নেওয়া যাক যার মাধ্যমে বুঝা যাবে মানুষ কেন ক্রিপ্টোকারেন্সি কে বিকল্প হিসেবে দেখছে!

 

  • বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাওয়া এর একটি মূল কারণ। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালে যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন বিটকয়েন এর আর্বিভাব হয়।  মানুষ তখন সম্পূর্ণ নতুনভাবে মুদ্রা, ব্যাংকিং এবং অর্থনীতিকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে।
  • দ্রুত স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে ক্রিপ্টোকারেন্সি। অনেক মানুষ এটা মনে করে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ট্রেড, ইনভেস্ট করে খুব তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হওয়া যায়। যেমনটা বিটকয়েনের বেলায় হয়েছে। আর এই সম্ভাবনাকে মানুষ কাজে লাগিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি এর ব্যবহার বাড়িয়ে তুলছে।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি কে ঘিরে বিভিন্ন দেশ নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করে চলছে। আর এসব থেকে পিছিয়ে নেই সাধারণ মানুষও। তারা ইতিমধ্যে বুঝতে শুরু করেছে যে ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে ভবিষ্যৎ মুদ্রা যার দ্বারা বিশ্ব চলবে।

এছাড়াও এক দেশ থেকে আরেক দেশে অন্যান্য মুদ্রার চেয়েও ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রানজেকশন ফি অনেক কম হয়। এই কারণেই ক্রিপ্টোকারেন্সি আরো দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।


এসব তো জানলাম, কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা বৈধ নয়, সত্যিই কি তাই? (Is it really illegal to use cryptocurrency?)

বাংলাদেশ এতদিন বৈধ ছিলনা ক্রিপ্টোকারেন্সি কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সিআইডির নিকট একটি চিঠি প্রদান করে আর তাতে উল্লেখ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি এর মাধ্যমে অর্থ আদানপ্রদান করা যেতে পারে। এতে বুঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে নমনীয়তা দেখাচ্ছে। এ ছাড়াও বিশ্বের নানা দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধতা পেয়েছে। যেমন পাশের দেশ ভারতেও ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধতা পেয়েছ। যদিও অনেক দেশ এখন পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার বৈধ করেনি তবে ধীরে ধীরে এইসব দেশগুলোর সংখ্যা কমে আসছে।


আমি বাংলাদেশ থেকে কি ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে পারব? ( Can I buy crypto from Bangladesh?)

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারক ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধ ঘোষনা করেনি তাই বলা চলে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন বৈধ করে নি। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে এখন অহরহ ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন হচ্ছে। তারপরও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এখনো ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন বৈধ নয়। 


সবই তো বুঝলাম কিন্তু ক্রিপ্টো ওয়ালেট কি? (What does crypto wallet means?)

আপনি যখন ব্যাংকে অর্থ রাখেন তখন আপনার একটি অ্যাকাউন্ট থাকে। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে আপনি যখন ইচ্ছা তখন উক্ত অর্থ খরচ করতে পারেন। আর এটি হচ্ছে ওই ব্যাংকের ওয়ালেট। তেমনি ভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি রাখার জন্য একটি অ্যাকাউন্ট থাকে আর ওই অ্যাকাউন্ট কে বলে ক্রিপ্টো ওয়ালেট। আর আপনি এই ওয়ালেট আপনার মোবাইল ফোনে বা ডেস্কটপে ব্যবহার করতে পারেন। আর এই ওয়ালেট গুলো ব্যবহার করতে ইন্টারনেট কানেকশন এর প্রয়োজন হয়। জনপ্রিয় কিছু ক্রিপ্টো ওয়ালেট হলো কয়েন বেস, এক্সোডাস বিটকয়েন এন্ড ক্রিপ্টো ওয়ালেট, ট্রেজর টি, মাইসেলিয়াম বিটকয়েন ওয়ালেট, ল্যাডজার ন্যানো এক্স, এডজ, ওয়াসাবি ওয়ালেট, বাইনান্স ইত্যাদি।


ক্রিপ্টোকারেন্সি তে কি ২৪ ঘন্টায় ট্রেড করা যায়? (Can cryptocurrency be traded in 24 hours?)

হ্যাঁ অবশ্যই আপনি সপ্তাহের ৭ দিন এবং দিনে ২৪ ঘন্টা প্রায় প্রতিনিয়ত ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেড করতে পারবেন। কিছু রয়েছে ২৪ ঘন্টায় করতে পারবেন আবার কিছু রয়েছে এক সপ্তাহে করতে পারবেন।

 

ক্রিপ্টোকারেন্সি কি কখনো বৈশ্বিক ভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে? (Is cryptocurrency ever going to be accepted globally?)

২০০৯ সাল থেকে বিটকয়েন ঊর্ধ্বগতির মুখে রয়েছে। অর্থাৎ এটির চাহিদা বেড়েই চলেছে। কমার্শিয়াল ব্যাংক সহ অনেক বিনিয়োগকারী ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণ করেছে। বর্তমানে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুলো যদিও ক্রিপ্টোকারেন্সি কে এখনো গ্রহণ করেনি তারপরও ভাবা হচ্ছে যে খুব শীঘ্রই তারা এটিকে গ্রহণ করবে।

আজ এই পর্যন্তই আপনাদের যদি ক্রিপ্টো কারেন্সি নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে তা জানাতে পারেন। ভাল থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।


You may like

ক্রিপ্টোকারেন্সির নিয়মিত খবর জানার জন্য যে সাইট গুলো আপনার নিয়মিত অনুসরণ করা উচিৎ।

ফরেক্স ট্রেডিং নিয়ে A টু Z সব তথ্য জেনে নিন সাথে ইসলামিক উত্তর সহ। Forex Trading In Bangladesh 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url