নতুনদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং-এর একটি সম্পূর্ণ গাইডলাইন - A Complete Guide to Cryptocurrency Trading for Beginners: Chapter-1

 

নতুনদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং-এর একটি সম্পূর্ণ গাইডলাইন - A Complete Guide to Cryptocurrency Trading for Beginners: Chapter-1


১. ট্রেডিং কি - What is trading?

ট্রেডিং হলো স্টক, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা কমডিটি মতো আর্থিক ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট বা সম্পদ ক্রয়-বিক্রয় করা। ট্রেডাররা সাধারণত খুব কম সময়ের জন্য ধারণা করে থাকে এবং দামের উত্থান-পতন থেকে লাভ করতে চায়।


যেমনঃ একজন ট্রেডার X কোম্পানির প্রতি শেয়ার ৫০ ডলারে ১০০টি শেয়ার কিনে দুই ঘণ্টা পর ৫২ ডলারে বিক্রয় করে ২০০ ডলার লাভ করল। অথবা ধরুন, আপনি একজন ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডার। বর্তমানে বিটকয়েনের দাম প্রতি কয়েন $50,000। আপনি মনে করেন যে কিছুদিনের মধ্যেই বিটকয়েনের দাম প্রতি কয়েন $60,000 এ উন্নীত হবে। সুতরাং, আপনি বর্তমান দামে বিটকয়েন কিনে রাখবেন এবং দাম উন্নীত হলে বিক্রি করে লাভ করবেন। এটাই হলো ট্রেডিংয়ের ধারণা। আশা করি বাংলায় ট্রেডিং-এর একটি সাধারণ উদাহরণের মাধ্যমে ধারণাটি স্পষ্ট হয়েছে।


ইনভেস্টিং কি? - What is investing?

ইনভেস্টিং হলো দীর্ঘমেয়াদি লাভ ও সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আর্থিক ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট বা সম্পদ ক্রয় করে ধারণ করা। ইনভেস্টররা ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট বা সম্পদ ভবিষ্যত মূল্যবৃদ্ধিতে নজর দেয়।

যেমনঃ একজন ইনভেস্টর Y কোম্পানির প্রতি শেয়ার ৫০ ডলারে ৫০০টি শেয়ার কিনল দীর্ঘমেয়াদে ধারণ করার জন্য। অথবা ধরুন,  আপনি একজন ক্রিপ্টো ইনভেস্টর। আপনি মনে করেন যে ইথেরিয়াম ক্রিপ্টোর ভবিষ্যত উজ্জ্বল। সুতরাং, আপনি বর্তমানে প্রতি ইথেরিয়াম $2500 দামে ১০টি ইথেরিয়াম ক্রয় করে আপনার ওয়ালেটে সংরক্ষণ করেন। আপনার ধারণা যে কয়েক বছরের মধ্যে ইথেরিয়ামের দাম প্রতি কয়েন $10,000 হবে। সেক্ষেত্রে আপনার বিনিয়োগের মূল্য চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে $40,000 হবে। এটিই হলো দীর্ঘমেয়াদী ইনভেস্টিং।


ট্রেডিং বনাম ইনভেস্টিং - Trading Vs Investing

পার্থক্য হলো সময়কাল এবং দৃষ্টিভঙ্গীতে। ট্রেডিং হলো দামের চঞ্চলতা ব্যবহার করা আর ইনভেস্টিং হলো দীর্ঘমেয়াদী মূল্যবৃদ্ধি।

যেমনঃ ট্রেডার দ্রুত লাভের লক্ষ্যে কাজ করে, আর ইনভেস্টর দীর্ঘমেয়াদী মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে। আরেকভাবে বলা যায়, ধরুন আপনি একজন ক্রিপ্টো ট্রেডার এবং আপনার বন্ধু হলেন একজন ক্রিপ্টো ইনভেস্টর। আপনি লক্ষ্য করেছেন যে গত কয়েক সপ্তাহে বিটকয়েনের দাম অস্থির ছিল এবং এখন একটু কমেছে। তাই আপনি মনে করেন বিটকয়েনের দাম আরও কমবে। সুতরাং আপনি বর্তমান দামে বিটকয়েন বিক্রি করে রাখলেন এবং পরে কম দামে কিনবেন যাতে লাভ হয়। অন্যদিকে, আপনার বন্ধু মনে করেন দীর্ঘমেয়াদে বিটকয়েনের দাম বাড়বেই। তাই তিনি বর্তমান কম দামেই বিটকয়েন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে বিক্রি করবেন যখন দাম আরও বেড়ে যাবে। এভাবে ট্রেডার ও ইনভেস্টরের দৃষ্টিভঙ্গি এবং লক্ষ্য ভিন্ন থাকে।

ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস -  Fundamental Analysis

এর মাধ্যমে আর্থিক অবস্থা যাচাই করে একটি ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট বা সম্পদ প্রকৃত মূল্যায়ন করা হয়।

যেমনঃ ফান্ডামেন্টাল অ্যানালিস্ট কোম্পানির অর্থনৈতিক রিপোর্ট দেখে তার প্রকৃত অবস্থার মূল্যায়ন করে। বা ধরুন, আপনি একজন ক্রিপ্টো ইনভেস্টর এবং বিটকয়েনে লম্বা মেয়াদে বিনিয়োগ করতে চান। তাই আপনি বিটকয়েনের ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস করেন। প্রথমে, আপনি বিটকয়েনের ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং কাজকর্ম সম্পর্কে গবেষণা করেন। তারপর আপনি বিটকয়েনের বিকাশ, ব্যবহারকারীর সংখ্যা, লেনদেনের পরিমাণ এবং অন্যান্য তথ্য খতিয়ে দেখেন। এছাড়া বিটকয়েন সংক্রান্ত আইন ও রেগুলেশনস সম্পর্কেও জানেন। এভাবে বিটকয়েনের ভিত্তিগত দিকগুলো বিশ্লেষণ করে আপনি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন


টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস - Technical Analysis

র মাধ্যমে গড় মূল্য এবং ভলিউম অনুসারে ভবিষ্যত গড় প্রত্যাশা করা হয়।

যেমনঃ টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট গ্রাফ ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ দাম প্রত্যাশা করে।  টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস-এর আরেকটি উদাহরণ: আপনি একজন ক্রিপ্টো ট্রেডার এবং দামের চঞ্চলতা ব্যবহার করে লাভ করতে চান। সুতরাং আপনি বিটকয়েনের টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস করেন। আপনি বিটকয়েনের গত ১ মাসের দাম পরিবর্তন, ভলিউম এবং ট্রেন্ডস নিরীক্ষণ করেন। এছাড়া বিটকয়েন চার্ট ব্যবহার করে সাপোর্ট এবং রেজিস্টেন্স লেভেল চিহ্নিত করেন। এই তথ্য দিয়ে আপনি বিশ্লেষণ করেন যে দাম কমবে বা বাড়বে। সে অনুসারেই কেনা-বেচার সিদ্ধান্ত নেন যাতে লাভ করতে পারেন।


ফান্ডামেন্টাল বনাম টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস - Fundamental analysis vs. technical analysis – which is better?


দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য প্রথমটি এবং দামের চঞ্চলতা ব্যবহারের জন্য দ্বিতীয়টি ভালো।

যেমনঃ দীর্ঘ মেয়াদে ফান্ডামেন্টাল এবং সংক্ষিপ্ত মেয়াদে টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করা হয়।

৭. ট্রেডিং বাজারকে কী প্রভাবিত করে - অর্থনৈতিক সূচক, জিওপলিটিক্যাল ইভেন্ট, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইত্যাদি বাজারকে প্রভাবিত করে। সরবরাহ ও চাহিদাও মূল্য নির্ধারণ করে।

যেমনঃ  ট্রেডিং-এ বাজারকে বিভিন্ন ফ্যাক্টর প্রভাবিত করে, যেমন:

  • অর্থনীতির অবস্থা: অর্থনীতির উন্নতি বা পতন বাজারকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, মন্দায় ট্রেডিং ভলিউম কমে যেতে পারে।
  • রাজনৈতিক ঘটনা: রাজনৈতিক অস্থিরতা বাজারে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুদ্ধ বা উত্থান দাম প্রভাবিত করতে পারে।
  • নিয়ন্ত্রকীয় বিধিনিষেধ: সরকারের নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণ বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ক্রিপ্টোকে নিষিদ্ধ করা হলে ট্রেডিং ভলিউম কমে যেতে পারে।
  • প্রযুক্তি: নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার বাজারকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। যেমন ব্লকচেইন প্রযুক্তি আসায় ক্রিপ্টো ট্রেডিং শুরু হয়েছিল।
  • জিও-পলিটিক্স: জিও-পলিটিক্স বা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং-এর বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু উদাহরণ:
  • যুদ্ধ বা রাজনৈতিক সংঘাত: বিশ্বের কোন অঞ্চলে যুদ্ধ বা সামরিক সংঘাত হলে তা বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে পারে। ইনভেস্টররা হেজ করতে পারে যা বাজারে প্রভাব ফেলে।
  • আইনি বিরোধ: দুই দেশের মধ্যে কোন আইনি বিরোধ হলে তা বাণিজ্যিক প্রভাব ফেলতে পারে যা ক্রিপ্টো ট্রেডিং-কেও প্রভাবিত করতে পারে।
  • প্রতিবন্ধকতা: কোন দেশ অপর দেশের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করলে তা ব্যবসায় প্রভাব ফেলে যা পরোক্ষভাবে ক্রিপ্টো ট্রেডিং-কেও প্রভাবিত করতে পারে।
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা এবং সিদ্ধান্তও ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং-এর বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু উদাহরণ:

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি সুদের হার বাড়ায়, তাহলে অন্যান্য নিরাপদ বিনিয়োগের তুলনায় ক্রিপ্টোতে আগ্রহ হ্রাস পায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণের নীতিমালা পরিবর্তন করলে তার প্রভাব পড়ে বাজারে।

মুদ্রাস্ফীতি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রিপ্টোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে যা বাজারে প্রভাব ফেলে। 

এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি বা সিদ্ধান্ত ক্রিপ্টো ট্রেডিং-কে প্রভাবিত করতে পারে।

 

বাজারের প্রবণতা (What is a market trend?)

বাজারের প্রবণতা হলো আর্থিক ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট বা সম্পদ মূল্য পরিবর্তনের দিক। এর ভিত্তিতে ট্রেডার এবং ইনভেস্টররা সিদ্ধান্ত নেয়।যেমনঃ বুলিশ বাজারে শেয়ারের দাম বেড়ে যায় কারণ ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ে। বুলিশ মার্কেট বা বুল মার্কেট হলো এমন একটি অবস্থা যখন শেয়ার বাজার, বন্ড বাজার, কমডিটি মার্কেট এবং রিয়েল এস্টেট মার্কেটের দাম বৃদ্ধি পায়।


market trend
Image source: Binance.com


বাজার চক্র (What is a market cycle?)

বাজার চক্র হলো বাজারের পরিবর্তনশীল পর্যায়গুলো। এর পরিচয় পেলে বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে। 

যেমনঃ মন্দার সময় শেয়ার বাজার পতনের কারণ অর্থনীতিতে দুর্বলতার কারণে বিক্রেতারা শেয়ার ছাড়ে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারেও বাজার চক্র লক্ষ্য করা যায়। ২০১৭ সালে বিটকয়েনের দাম প্রতি কয়েন প্রায় ২০ হাজার ডলারের কাছাকাছি ছিল। তখন বাজার একটি বুল মার্কেট (বৃদ্ধির বাজার) অবস্থায় ছিল। কিন্তু ২০১৮ সাল নাগাদ বিটকয়েনের দাম প্রতি কয়েন ৬ হাজার ডলারের নীচে নেমে এল। এটি ছিল একটি বেয়ার মার্কেট (হ্রাসের বাজার)। পরে ২০২১ সাল নাগাদ দাম আবার ৬০ হাজার ডলার এর কাছাকাছি উঠে গেল। এটি ছিল আবার বুল মার্কেট। এভাবে বাজারের চক্র অনুসারে ক্রিপ্টোর দাম উত্থান-পতন করে থাকে। 


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ শিঘ্রয়ই আমরা চ্যাপ্টার-২ দিয়ে আসছি, চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url