নতুনদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং-এর একটি সম্পূর্ণ গাইডলাইন - A Complete Guide to Cryptocurrency Trading for Beginners: Chapter-1
১. ট্রেডিং কি - What is trading?
ট্রেডিং হলো স্টক, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা কমডিটি মতো আর্থিক ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট বা সম্পদ ক্রয়-বিক্রয় করা। ট্রেডাররা সাধারণত খুব কম সময়ের জন্য ধারণা করে থাকে এবং দামের উত্থান-পতন থেকে লাভ করতে চায়।
যেমনঃ একজন ট্রেডার
X কোম্পানির প্রতি শেয়ার ৫০ ডলারে ১০০টি শেয়ার কিনে দুই ঘণ্টা পর ৫২ ডলারে বিক্রয়
করে ২০০ ডলার লাভ করল। অথবা ধরুন,
ইনভেস্টিং কি? - What is investing?
ইনভেস্টিং হলো দীর্ঘমেয়াদি লাভ ও সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আর্থিক ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট বা সম্পদ ক্রয় করে ধারণ করা। ইনভেস্টররা ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট বা সম্পদ ভবিষ্যত মূল্যবৃদ্ধিতে নজর দেয়।
যেমনঃ একজন ইনভেস্টর
Y কোম্পানির প্রতি শেয়ার ৫০ ডলারে ৫০০টি শেয়ার কিনল দীর্ঘমেয়াদে ধারণ করার জন্য। অথবা ধরুন,
ট্রেডিং বনাম ইনভেস্টিং - Trading Vs Investing
পার্থক্য হলো সময়কাল এবং দৃষ্টিভঙ্গীতে। ট্রেডিং হলো দামের চঞ্চলতা ব্যবহার করা
আর ইনভেস্টিং হলো দীর্ঘমেয়াদী মূল্যবৃদ্ধি।
যেমনঃ ট্রেডার দ্রুত
লাভের লক্ষ্যে কাজ করে, আর ইনভেস্টর দীর্ঘমেয়াদী মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে। আরেকভাবে বলা যায়,
ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস - Fundamental Analysis
এর মাধ্যমে আর্থিক অবস্থা যাচাই করে একটি ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট বা সম্পদ প্রকৃত
মূল্যায়ন করা হয়।
যেমনঃ ফান্ডামেন্টাল
অ্যানালিস্ট কোম্পানির অর্থনৈতিক রিপোর্ট দেখে তার প্রকৃত অবস্থার মূল্যায়ন করে। বা ধরুন,
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস - Technical Analysis
এর মাধ্যমে গড় মূল্য এবং ভলিউম অনুসারে ভবিষ্যত গড় প্রত্যাশা করা হয়।
যেমনঃ টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট
গ্রাফ ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ দাম প্রত্যাশা করে।
ফান্ডামেন্টাল বনাম টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস - Fundamental analysis vs. technical analysis – which is better?
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য প্রথমটি এবং দামের চঞ্চলতা
ব্যবহারের জন্য দ্বিতীয়টি ভালো।
যেমনঃ দীর্ঘ মেয়াদে
ফান্ডামেন্টাল এবং সংক্ষিপ্ত মেয়াদে টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করা হয়।
৭. ট্রেডিং বাজারকে কী প্রভাবিত
করে - অর্থনৈতিক সূচক, জিওপলিটিক্যাল ইভেন্ট, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইত্যাদি বাজারকে প্রভাবিত
করে। সরবরাহ ও চাহিদাও মূল্য নির্ধারণ করে।
যেমনঃ
- অর্থনীতির অবস্থা: অর্থনীতির উন্নতি বা পতন বাজারকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, মন্দায় ট্রেডিং ভলিউম কমে যেতে পারে।
- রাজনৈতিক ঘটনা: রাজনৈতিক অস্থিরতা বাজারে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুদ্ধ বা উত্থান দাম প্রভাবিত করতে পারে।
- নিয়ন্ত্রকীয় বিধিনিষেধ: সরকারের নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণ বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ক্রিপ্টোকে নিষিদ্ধ করা হলে ট্রেডিং ভলিউম কমে যেতে পারে।
- প্রযুক্তি: নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার বাজারকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। যেমন ব্লকচেইন প্রযুক্তি আসায় ক্রিপ্টো ট্রেডিং শুরু হয়েছিল।
- জিও-পলিটিক্স: জিও-পলিটিক্স বা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং-এর বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু উদাহরণ:
- যুদ্ধ বা রাজনৈতিক সংঘাত: বিশ্বের কোন অঞ্চলে যুদ্ধ বা সামরিক সংঘাত হলে তা বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে পারে। ইনভেস্টররা হেজ করতে পারে যা বাজারে প্রভাব ফেলে।
- আইনি বিরোধ: দুই দেশের মধ্যে কোন আইনি বিরোধ হলে তা বাণিজ্যিক প্রভাব ফেলতে পারে যা ক্রিপ্টো ট্রেডিং-কেও প্রভাবিত করতে পারে।
- প্রতিবন্ধকতা: কোন দেশ অপর দেশের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করলে তা ব্যবসায় প্রভাব ফেলে যা পরোক্ষভাবে ক্রিপ্টো ট্রেডিং-কেও প্রভাবিত করতে পারে।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা এবং সিদ্ধান্তও ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং-এর বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু
উদাহরণ:
- কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি সুদের হার বাড়ায়, তাহলে অন্যান্য নিরাপদ বিনিয়োগের তুলনায় ক্রিপ্টোতে আগ্রহ হ্রাস পায়।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণের নীতিমালা পরিবর্তন করলে তার প্রভাব পড়ে বাজারে।
- মুদ্রাস্ফীতি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রিপ্টোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে যা বাজারে প্রভাব ফেলে।
এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি বা সিদ্ধান্ত ক্রিপ্টো ট্রেডিং-কে প্রভাবিত করতে পারে।
বাজারের প্রবণতা (What is a market trend?)
বাজারের প্রবণতা হলো আর্থিক ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেট বা সম্পদ মূল্য পরিবর্তনের দিক। এর ভিত্তিতে ট্রেডার এবং ইনভেস্টররা সিদ্ধান্ত নেয়।যেমনঃ বুলিশ বাজারে শেয়ারের দাম বেড়ে যায় কারণ ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ে। বুলিশ মার্কেট বা বুল মার্কেট হলো এমন একটি অবস্থা যখন শেয়ার বাজার, বন্ড বাজার, কমডিটি মার্কেট এবং রিয়েল এস্টেট মার্কেটের দাম বৃদ্ধি পায়।
Image source: Binance.com |
বাজার চক্র (What is a market cycle?)
বাজার চক্র হলো বাজারের পরিবর্তনশীল পর্যায়গুলো। এর পরিচয় পেলে বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে।
যেমনঃ মন্দার সময় শেয়ার বাজার পতনের কারণ অর্থনীতিতে দুর্বলতার কারণে বিক্রেতারা শেয়ার ছাড়ে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারেও বাজার চক্র লক্ষ্য করা যায়। ২০১৭ সালে বিটকয়েনের দাম প্রতি কয়েন প্রায় ২০ হাজার ডলারের কাছাকাছি ছিল। তখন বাজার একটি বুল মার্কেট (বৃদ্ধির বাজার) অবস্থায় ছিল। কিন্তু ২০১৮ সাল নাগাদ বিটকয়েনের দাম প্রতি কয়েন ৬ হাজার ডলারের নীচে নেমে এল। এটি ছিল একটি বেয়ার মার্কেট (হ্রাসের বাজার)। পরে ২০২১ সাল নাগাদ দাম আবার ৬০ হাজার ডলার এর কাছাকাছি উঠে গেল। এটি ছিল আবার বুল মার্কেট। এভাবে বাজারের চক্র অনুসারে ক্রিপ্টোর দাম উত্থান-পতন করে থাকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ শিঘ্রয়ই আমরা চ্যাপ্টার-২ দিয়ে আসছি, চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। ধন্যবাদ।