ফরসেজ কি? কিভাবে এটি কাজ করে এবং ফরসেজ থেকে ইনকাম করার সহজ উপায় গুলো জানুন।

 

ফরসেজ কি?

ফরসেজ তিনটি ম্যাট্রিক্সের মাধ্যমে কাজ করে। নতুন সদস্যরা যোগদান করার সাথে এই ম্যাট্রিক্সের স্লট পূরণ হয়। যে সদস্য একটি লেভেলে স্লট অকপারিয়ে থাকে তাঁকে সেই লেভেলে যুক্ত হওয়া নতুন সদস্যরা কমিশন দেয়।

এর সাথে অনেক জোখার রয়েছে যেমন - নিয়ন্ত্রণের অভাব, ক্রিপ্টোর উংশসঞ্চালন, স্মার্ট কনট্র্যাক্টের বাগ, আইনী ঝুঁকি ইত্যাদি।

সব মিলিয়ে ফরসেজ  যোগদান করার আগে প্রয়োজনীয় গবেষণার ও জোখার বিবেচনা করতে হবে।

 

ফরসেজ কিভাবে কাজ করে?

স্মার্ট কনট্র্যাক্ট তৈরি: ফরসেজের প্ল্যাটফর্মের ভিত্তি কিছু ইথিরিয়াম ব্লকচেইনে ডিপ্লয় করা স্মার্ট কনট্র্যাক্ট। এরা আগে থেকে নির্ধারণ করা নিয়ম আর শর্তাবলী সহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে।

রেজিস্ট্রেশন এবং পেমেন্ট: ফরসেজে অংশ নেওয়ার জন্য একটা ইথিরিয়াম ওয়ালেট এবং Ether ক্রিপ্টো প্রয়োজন। রেফেরেল লিঙ্ক দিয়ে অথবা ওয়েবসাইট দিয়ে রেজিস্টার করতে হয়। রেজিস্ট্রেশনের পর একবারে ফি দিয়ে ম্যাট্রিক্সের এক বা একাধিক লেভেলে জায়গা কিনতে হয়।

ম্যাট্রিক্স স্ট্রাকচার: ফরসেজ এমএলএম-এর ম্যাট্রিক্স মডেল ব্যবহার করে। একটা ম্যাট্রিক্স-এ বিভিন্ন স্লট হয় আর সেখানে নতুন অংশগ্রহী যোগদান করলেই সেই স্লট পূরণ হয়।

সিফারিস সিস্টেম: ফরসেজের সিফারিস করার মাধ্যমেই কমিশন পাওয়া যায়। সিফারিস করলে যে কোন ব্যক্তি যোগদান করলে তাঁর ইন্ভেস্টমেন্টের আধারে কমিশন দেওয়া হয়।

সাইকেলিং এবং আয়: স্লট পূরণ হলে অংশগ্রহী ম্যাট্রিক্সের নতুন লেভেলে উন্নীত হয়। প্রতিটা লেভেল উন্নীতিতে তেমনই কমিশন পাওয়া যায়। এই নিয়ম অনুসারেই আরও অংশগ্রহী যোগদান করলে স্লট পূরণ হয়।

P2P ট্রানজ্যাকশন: ফরসেজের মধ্যে সকল পেমেন্ট অংশগ্রহীদের মধ্যেই হয়। যখন কেউ উচ্চ লেভেলে স্লট পূরণ করে তখন পেমেন্টটা সেই স্লটের অংশগ্রহীকে যায়। স্মার্ট কনট্র্যাক্ট এই ট্রানজ্যাকশনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে করে যেখানে পারস্পরিক জবাবদিহি থাকে। 

আয়ের সম্ভাবনা: ফরসেজে আয়ের সম্ভাবনা নির্ভর করে সিফারিস,ডাউনলাইন অংশগ্রহীদের কাজ এবং অংশগ্রহণের পরিমাণে।

ঝুঁকি এবং বিবেচনা: ফরসেজে ও নিয়ন্ত্রণের অভাব, ঋণ সঞ্চালন ও এমএলএম মডেলের স্থায়িত্ব নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে। সতর্কতা অবলম্বন করুন।

ফরসেজে  গ্রহণ করার আগে সহজে জোর দিতে হবে গবেষণার ও জোখার সম্বন্ধে জ্ঞান পাওয়ার।

 

আরো পড়ুনঃ 

ফরেক্স ট্রেডিং নিয়ে A টু Z সব তথ্য জেনে নিন সাথে ইসলামিক উত্তর সহ। ফরেক্স ট্রেডিং ইন বাংলাদেশ

ফরসেজের সুবিধা

ফরসেজ বা এরকম স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট ভিত্তিক MLM প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করার কিছু সুবিধা রয়েছে যেমন:

ডিসেন্ট্রালাইজড - স্মার্ট কনট্র্যাক্ট ভিত্তিক হওয়ায় এবং ইথিরিয়াম ব্লকচেইনের উপর ভিত্তি করায় এই প্লাটফর্ম ডিসেন্ট্রালাইজড। এর ফলে ক্যানট্রালাইজড অ্যাথোরিটির প্রয়োজন হয় না। সব ট্র্যান্জ্যাকশন ব্লকচেইনে দেখা যায়।

কোন মিডলম্যান নেই - নির্ভর করে না কোন থার্ড পার্টি উপর। সবাই সীডাইরেক্টভাবেই ট্র্যানজ্যাকশন করে।

নির্বাহী আয় - ডাউনলাইন অংশগ্রহীদের কাজ এবং সিফারিসের মাধ্যমে পাসিভ আয়ের সুযোগ রয়েছে।

কম ইনপুট কস্ট - ট্র্যাডিশনালে তুলনামূলকভাবে কম ইনপুট কস্ট রয়েছে এই প্ল্যাটফর্মে।

পারস্পরিক জবাবদিহি - স্মার্ট কনট্র্যাক্ট ও ব্লকচেইন দিয়ে সকলের মধ্যে জবাবদিহি রয়েছে।

সার্বজনীন উপলব্ধি - বিশ্বব্যাপী অঙ্গগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

তবে ম্যার্কেট ভ্যাল্যু এবং ঝুঁকির কারণে হারানোও সম্ভব। সতর্কভাবে গবেষণা করেই অংশগ্রহণ করবেন এবং নিজের সম্ভাব্য ঝুঁকি সীমা বুঝে নির্বিচারে পুঁজি ঝুঁকিতে দিবেন না।

 

ফরসেজের অসুবিধা

ফরসেজ বা এরকম স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট ভিত্তিক MLM প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করার কিছু ঝুঁকি রয়েছে যা সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীদের জানা প্রয়োজনীয়। ফরসেজের সাথে যুক্ত কিছু ঝুঁকির কথা নিম্নে বলা হল:

নিয়ন্ত্রণের অভাব: ফরসেজ স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট MLM-এর এই অনিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্রে কাজ করে। আর্থিক কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে প্রতারণার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

পঞ্জি স্কিমের উদ্বেগ: ফরসেজের ব্যবসা মডেলকে ক্রিটিকরা পঞ্জি স্কিমের সাথে তুলনা করেছেন। এর টেকসইতা নতুন সদস্য নিয়োগে নির্ভরশীল।

বাজারের অস্থিরতা: ফরসেজে আয়ের সম্ভাবনা নতুন সদস্য নিয়োগ এবং বাজার কার্যকলাপে নির্ভর করে। ক্রিপ্টো বাজার খুব অস্থির থাকায় আয় ও ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।

নিয়ামকীয় উদ্বেগ: কিছু এলাকায় ফরসেজকে আইনগত দৃষ্টিতে সমস্যাজনক বলে দেখা হতে পারে। এতে অংশ নেওয়ায় ব্যক্তিদের আইনি ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হতে পারে।

কঠিন এক্সিট: ফরসেজ থেকে বের হওয়া সহজ নাও হতে পারে, বিশেষ করে যদি প্ল্যাটফর্মে কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যা হয় বা অংশগ্রহণকারীরা নতুন সদস্যদের খুঁজে পান না। সহজে প্রত্যাহারের এই অভাব ফলে অংশগ্রহণকারীরা তাদের উপার্জন আদায় করতে অক্ষম হতে পারে।

উচ্চ গ্যাস ফি: ফরসেজ ইথেরিয়াম ব্লকচেইনে কাজ করে, যার ফলে লেনদেনে গ্যাস ফি দিতে হয়। নেটওয়ার্ক চাপ বেশি থাকার সময় গ্যাস ফি অনেক বেশি হতে পারে, যা আয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

গোপনীয়তার উদ্বেগ: ফরসেজে অংশ নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত তথ্য বা ক্রিপ্টো ওয়ালেট ঠিকানা দেওয়া লাগতে পারে। এটি নিয়ন্ত্রণ কম থাকার পরিবেশে গোপনীয়তার উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।

অপারদর্শিতা: ফরসেজ ব্লকচেইন ভিত্তিক বলে পারদর্শী বললেও প্রতিষ্ঠাকারী এবং প্রশাসকদের পরিচয় গোপন রয়েছে। এই অপারদর্শিতা কিছু বিনিয়োগকারীর জন্য হতে পারে রেড ফ্ল্যাগ।

সমাপ্তিতে, ফরসেজ এবং এরকম স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট এমএলএম প্ল্যাটফর্ম বিভিন্ন ঝুঁকির সাথে আসে যা সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীদের সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা উচিত। ফরসেজ বা এরকম কোন প্ল্যাটফর্মে যোগদানের আগে সঠিক গবেষণা, পেশাদার পরামর্শ এবং ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা অত্যাবশ্যক। এসবে বিনিয়োগ করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং কেবল যেটুকু হারানোর মত সামর্থ্য আছে তাই বিনিয়োগ করুন।

ফরসেজ থেকে ইনকাম

রেজিস্ট্রেশন: ইথিরিয়াম ওয়ালেট ও ETH লাগবে। ফরসেজ ওয়েবসাইট থেকে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করুন। অথবা রেফারেল লিংক ব্যবহার করেই রেজিস্টার করা যায়।ম্যাট্রিক্স ক্রয়: ম্যাট্রিক্সে জায়গা কিনতে হবে। প্রতিটা ম্যাট্রিক্সে আয়ের সম্ভাবনা ভিন্ন।

সিফারিস: নতুন সদস্যদের সিফারিস করে তাদের জায়গা কিনতে চাইলেই কমিশন পাওয়া যাবে।

সায়কেলিং: ম্যাট্রিক্স পূরণ হলে আরও জায়গায় উন্নীতি পাওয়া যাবে এবং আয় পাওয়া যাবে।

নির্বাহী আয়: ডাউনলাইনের কাজে পাসিভ আয় পাওয়া যায়। ডাউনলাইন জয়েন্ত যত বেশী সফল হবে আয়ও বাড়বে।

পুনর্বিনয়: আয় অগ্রগত ম্যাট্রিক্সে ফেরত দিতে পারেন যা আরও আয় দিবে।

1. ম্যাট্রিক্স বোনাস:

• প্রতিটি ম্যাট্রিক্সে আপনি যখন কেউ নতুন হিসাবে যোগদান করে তখন বোনাস পাবেন।
• প্রতিটি ম্যাট্রিক্সের জন্য বোনাস পরিমাণ ভিন্ন।

2. বাইনারি বোনাস:

• আপনার ডান ও বাম পাশে যত বেশি সদস্য থাকবে বাইনারি ট্রিতে আপনার বোনাস তত বেশি হবে।

3. লিডারশীপ বোনাস:

• প্রতিটি ম্যাট্রিক্সে আপনি যত বেশি সদস্য আনবেন আপনার লিডারশীপ বোনাস তত বেশি হবে।

 

তবে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং গবেষণা করুন। নিজের সম্ভাব্যতম ঝুঁকি সীমা বুঝুন আগে।

 

ফরসেজে অংশগ্রহণের জন্য কি প্রয়োজন?

ফরসেজে অংশগ্রহণ করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে:

• ক্রিপ্টো ওয়ালেট: ফরসেজে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রথমেই একটি ক্রিপ্টো ওয়ালেট খোলা দরকার যেখানে থেকে অর্থ পাঠানো যাবে এবং প্রাপ্তি হবে।
• ইথেরিয়াম: ফরসেজ ইথেরিয়াম ব্লকচেইনে কাজ করে। সুতরাং অংশগ্রহণের জন্য ইথেরিয়াম ক্রিপ্টোকারেন্সি দরকার।
• স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট সাশ্রয়ী: ফরসেজের স্মার্ট কন্ট্র্যাক্টের সাথে ইন্টার্যাক্ট করার জন্য স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট সাশ্রয়ী হিসাবে মেটামাস্ক বা ট্রাস্ট ওয়ালেট প্রয়োজন।
• রেফারাল লিঙ্ক: ফরসেজে যোগদানের জন্য একজন রেফারারের রেফারাল লিঙ্ক প্রয়োজন হয়।
• অংশগ্রহণ ফি: প্রতিটি ম্যাট্রিক্সে যোগদানের জন্য একটি নির্দিষ্ট অংশগ্রহণ ফি প্রদান করতে হয়।
• কম্পিউটার বা স্মার্টফোন অ্যাক্সেস: ফরসেজের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে অ্যাক্সেস করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগসহ ডিভাইসের প্রয়োজন।

ফরসেজে অংশগ্রহণ ফি কত?

ফরসেজে অংশগ্রহণের জন্য প্রতিটি ম্যাট্রিক্সে একটি নির্দিষ্ট অংশগ্রহণ ফি প্রয়োজন। ফরসেজের অংশগ্রহণ ফি নিম্নের মতো:

ম্যাট্রিক্স 0: 0.05 ETH

ম্যাট্রিক্স 1: 0.1 ETH

ম্যাট্রিক্স 2: 0.2 ETH

ম্যাট্রিক্স 3: 0.4 ETH

ম্যাট্রিক্স 4: 0.8 ETH

ম্যাট্রিক্স 5: 1.6 ETH

ম্যাট্রিক্স 6: 3.2 ETH

ম্যাট্রিক্স 7: 6.4 ETH

ম্যাট্রিক্স 8: 12.8 ETH

ম্যাট্রিক্স 9: 25.6 ETH

ম্যাট্রিক্স 10: 51.2 ETH

ম্যাট্রিক্স 11: 102.4 ETH

ম্যাট্রিক্স 12: 204.8 ETH

ম্যাট্রিক্স 13: 409.6 ETH

প্রতিটি পর্যায়ে ফি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। আরো উচ্চ ম্যাট্রিক্সে যাওয়ার জন্য এই ফি প্রদান করতে হয়।

 

ফরসেজ নিয়ে সতর্কতা

ফরসেজ বা এরকম স্মার্ট কন্ট্র্যাক্ট ভিত্তিক এমএলএম প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সময় নিম্নলিখিত বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

১. প্রতারণার ঝুঁকি - ফরসেজের মতো স্কিমগুলো প্রতারণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২. কোন নিশ্চিত আয় নেই - এই ধরনের প্রোগ্রাম থেকে আয় করার কোন নিশ্চিততা নেই।

৩. অভ্যন্তরীণ কাজকর্ম অজানা - ফরসেজের প্রশাসন এবং অর্থ ব্যবস্থাপনা অজানা।

৪. বিনিয়োগ হারানোর ঝুঁকি - অর্থ হারানোর বা লক হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

৫. নিয়ামকীয় সমস্যা - কিছু দেশে ফরসেজ বৈধ নয় বা আইনি দিক থেকে সমস্যাজনক।

৬. প্রত্যাহার কঠিন - অর্থ ফেরত পাওয়া কঠিন হতে পারে।

সুতরাং, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এবং যেটুকু হারানোর মত অর্থ নিয়েই ফরসেজে অংশগ্রহণের পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।